২৪ আগস্ট ২০১৬ বুধবার, ০৩:২৫ পিএম
রণজিৎ সরকার
নতুনসময়.কম
![]() |
গাড়িতে বসে আছি। গেটের পাশের সিটে। দুই গেটের গাড়ি না। এটা এক গেটওয়ালা গাড়ি। গাড়িটার নাম আট নম্বর। আমি প্রতিদিন এই গাড়িতেই আসা-যাওয়া করি। অফিসে যাওয়ার পথে কল্যাণপুর থেকে ফার্মগেট। কখনো প্রয়োজনে- শাহবাগ বা মতিঝিল। গাড়িতে প্রতিদিন বিভিন্ন রকমের ঘটনা ঘটে। ভাড়া নিয়ে কন্ডাক্টরের সঙ্গে যাত্রীদের ঝগড়া।
ঢাকা শহরে নতুন আসা কোনো ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট জায়গায় না নামিয়ে অন্য জায়গায় নামিয়ে দেওয়া। এ নিয়ে তর্ক। কখনো মহিলা সিটে পুরুষ বসা নিয়ে তর্ক। কখনো বা কারও মোবাইল চুরি হওয়া নিয়ে আতঙ্ক। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাফ ভাড়া নিয়ে ঝগড়া। গাড়ি ধীরে চালানোর জন্য ড্রাইভারকে বকা দেওয়া। কেউ বা জ্যামে বসে সরকারকে বকা দেয়। কত কথা কতজনের মুখে। এসব ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে। যারা আট নম্বর গাড়িতে উঠেছেন তারা বুঝতে পারবেন।
আমি একটা ঘটনা দেখছি, ঢাকা শহরে আসার পর থেকে। হেলপারের কাণ্ডকারখানা দেখে অবাক হই। ঘটনাটার কথা বলি- যখন কোনো নারী গেট দিয়ে গাড়ির ভেতর উঠতে থাকে। তখন হেলপার তার হাত দিয়ে ওই নারীটির পিঠে হাত রেখে ধাক্কা দেয়। এতে কোনো নারী হয় তো ভদ্রতার জন্য কিছু বলেন না। প্রতিবাদ করে না। আমি অবাক হই।
আজ কথাগুলো মনে পড়ার পর হেলপারের দিকে তাকিয়ে আছি। গাড়িতে ওঠার জন্য এক তরুণী অপেক্ষা করছে। আমি বুঝতে পারলাম। আট নম্বর গাড়িতে উঠবে না। উঠলে হয়তো গাড়ির দিকে এগিয়ে আসত। এলো না। দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে হঠাৎ হেলপার তাকিয়ে বলল, ‘ইস, কি সুন্দর জিনিসটা। গাড়ি উঠিলে তার নরম শরীরের হাত রাখতাম।’ এই বলেই সে যাত্রাবাড়ী যাত্রাবাড়ী বলে ডাকছে আর তরুণীরটির দিকে তাকিয়ে আছে। গাড়ি ছেড়ে দিল কলেজে গেট থেকে। ওর ডাকা শেষ হলো।
তারপর আমি হেলপারকে বললাম, মামা, গাড়িতে ওঠার সময় নারীদের পিঠে যে হাত দাও। কেউ কিছু বলে না?
হেলপার মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ‘উঠতে সাহায্য করি। বিশেষ করে তরুণীদের পিঠে হাত রেখে মজা পাই। কেউ কিছুই বলে না। তাড়াহুড়া করে ওঠে তো। এই সুযোগে মজাটা নিয়ে লই।’
আমি বললাম, এটা করা ঠিক না। এমন নারীর তালে পড়বে। তোমার মজা সেই দিন বুঝবে। খবরদার এ অভ্যাস আজ থেকে তুমি তো ত্যাগ করবে। অন্যকেও ত্যাগ করতে বলবে।
আমার কথাগুলো গুরুত্ব না দিয়ে সে আবার যাত্রাবাড়ী যাত্রাবাড়ী বলে ডাকতে লাগল। আমি আর কোনো কথা বললাম না। কারণ সে আমার কথা মূল্যায়ন করছে না। তবুও একটু পর আবার বললাম, ভাই আমার কথাটা কিন্তু মনে রাখবে।
আমি মনে মনে ভাবলাম, আজ যদি প্রতিবাদী কোনো একটা মেয়ে পেতাম, তাহলে খুব ভালো হতো। ভাবছি, আর চুপচাপ করে বসে আছি। কলেজে গেট থেকে একটি মেয়ে গাড়িতে উঠতে লাগল। এর মধ্যে হেলপার তার পিঠ হাত রাখল। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটা তার গালে থাপ্পড় মারল। তারপর বলল, ‘আমি কি প্রতিবন্ধী? আমার পিঠে হাত রাখতে হবে। এর আগেও অনেক মেয়ের পিঠে হাত রাখতে দেখেছি তোদের। আমি নিজেও ভুক্তভোগী। কিন্তু কিছু বলিনি এত দিন। আজ আর সহ্য করতে পারলাম না। খবরদার আর কোন দিন কোন মেয়ে শরীরে যেন হাত রাখা না হয়।’
হেলপার বলল, ‘আট নম্বরে উঠলে এত একটু সহ্য করতেই হবে।’ হেলপারের কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির ভেতর হইচই শুরু হলো। কেউ কেউ হেলপারকে মারতে গেল। হেলপার গেটে থেকে নেমে দিল দৌড়...
নতুনসময়.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।